প্রকাশিত: Sat, Jun 3, 2023 4:42 PM
আপডেট: Fri, May 9, 2025 2:13 PM

নোবিপ্রবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত কমিটি করবে ইউজিসি

মাজহারুল মিচেল: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। 

তারা আমাদের নতুন সময়কে জানান, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সভা বা সেমিনার করতে বারংবার বাধা প্রদান করেছেন নোবিপ্রবি উপাচার্য ড. মো. দিদার-উল-আলম। এছাড়াও আর্থিক অনিয়ম, ইচ্ছামাফিক নিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়নকার্যে চরম স্থবিরতা ও ব্যক্তিস্বার্থে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২ মে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের উপসচিব স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে শিক্ষা সচিবকে নোবিপ্রবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে এসকল বিষয়ের অভিযোগের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঐ অভিযোগপত্রটির একটি অনুলিপি আমাদের নতুন সময়ের হাতে আসে।

এ অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সরকারী দিবসগুলো নিয়ম-মাফিক পালন করা হলেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন একাডেমিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে অনুমতি দেয়া হয়নি। 

তারা জানান, উপাচার্য একই সাথে গেস্ট হাউজ ও বিনা ভাড়ায় বাংলো ব্যবহার করেন। এমনকি উপাচার্য তার বেতন বিবরণীতে কোন বাড়ি ভাড়াই প্রদর্শন করেননা। এছাড়াও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কোন দায়িত্বই পালন না করে উনি নির্ধারিত ভাতা গ্রহণ করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। যার ফলে, শিক্ষার্থীদের সনদপত্রে নিজের আইনি দুর্বলতা ঢাকার জন্য নিজে স্বাক্ষর না করে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে দিয়ে করান।

এমনকি দায়সারাভাবে নিয়োগবোর্ড বসিয়ে একাধিক বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। 

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, বিশ^বিদ্যালয়ের নতুন তিনটি বিভাগে (সয়েল সাইন্স, পদার্থ ও রসায়ন বিভাগ) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক এখনও কোন সিলেকশন বোর্ডের সদস্য চূড়ান্ত করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায় যে, ২টি ইনস্টিটিউট ও ১০ টি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ৩০ মার্চ ২০২৩ তারিখে একটি  নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। মাত্র ১০ কার্যদিবস সময় দিয়ে ১২ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয় যা দেশের আইন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম বহির্ভূত। 

বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ প্রক্রিয়ায় ২০২২ সনে বিভিন্ন বিভাগে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত ৫২ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। 

এ ব্যাপারে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আতিকুর রহমান ভূইয়া বলেন, আমি ছিলাম ঐ বোর্ডে। কিন্তু আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের সাথে যোগাযোগ করেন।

শিক্ষকবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, অনেক শিক্ষককে ন্যায্য পদোন্নতিও দেয়া হচ্ছে না। ওশানোগ্রাফি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোস্তফাকে গত দেড় বছর পদোন্নতি দেয়া হয়নি। 

সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার পাল এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার পদোন্নতির সময় হয়েছে বহু আগে, কিন্তু আমাকে পদোন্নতি না দিয়ে নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

নোবিপ্রবির অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ইউজিসি সচিব  ড. মো. ফেরদৌস জামানের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাদের নতুন সময়কে জানান, আমরা এ বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল। কেবিনেট ডিভিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমদের এক সপ্তাহের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্ট পেশ করার কথা বলেছিল। কিন্তু সেটাতে আমরা ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে অরেকটি তাগিদপত্র দেয়া  হয়। আমি আশা করি দুই এক দিনের মধ্যেই একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হবে।

এদিকে, নোবিপ্রবি উপাচার্য ড. দিদার উল আলম ও উপ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আব্দুল বাকি’র সাথে বিভিন্ন সময় কথা বলতে চাইলে তারা ফোন রিসিভ করেননি। একাধিকবার ক্ষুদে বার্তা দিয়ে অনুরোধ জানালে তাতেও সাড়া দেননি তারা। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব